Artifact-এর পতন: মূল উদ্দেশ্য হারিয়ে ফেলা ও চাহিদার সংকটের ফলশ্রুতি

 Artifact-এর পতন: মূল উদ্দেশ্য হারিয়ে ফেলা ও চাহিদার সংকটের ফলশ্রুতি

      ইনস্টাগ্রামের সহ-প্রতিষ্ঠাতা কেভিন সিস্ট্রোম (Kevin Systrom) এবং মাইক ক্রিগার (Mike Krieger) ২০২৩ সালে 'Artifact' নামে একটি AI-ভিত্তিক নিউজ অ্যাপ চালু করেন। এর লক্ষ্য ছিল AI প্রযুক্তির সাহায্যে ব্যবহারকারীদের জন্য ব্যক্তিগতকৃত ও বুদ্ধিদীপ্ত সংবাদ সরবরাহ করা। প্রথমদিকে অ্যাপটি সাড়া ফেললেও, সময়ের সাথে জনপ্রিয়তা হারায় এবং ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে এটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।


Artifact কী ছিল?


      Artifact-কে বলা হতো "নিউজের জন্য টিকটক," যেখানে ব্যবহারকারীরা এআই-এর সাহায্যে সংবাদ খুঁজে পেতে এবং তা নিয়ে আলোচনা করতে পারত। ইনস্টাগ্রাম ছাড়ার পর সিস্ট্রোম ও ক্রিগারের এটি ছিল প্রথম বড় উদ্যোগ। শুরুতে সাফল্য পেলেও, পরবর্তীতে তারা মূল উদ্দেশ্য থেকে সরে যায়। অ্যাপটির AI-নির্ভর সংবাদ ফিচারের পাশাপাশি Pinterest-এর মতো লিংক শেয়ার এবং Twitter-এর মতো টেক্সট পোস্টের সুবিধা যুক্ত করা হয়, যা অ্যাপটির মূল ধারণা ধোঁয়াশায় ফেলে দেয়। প্রকল্পটিতে ৮ জনের একটি দল কাজ করছিল এবং এটি সম্পূর্ণভাবে নিজেদের তহবিলে পরিচালিত হচ্ছিল।


পেছনের গল্প


      Artifact-এর জীবনকাল খুবই সংক্ষিপ্ত হলেও এর মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছিল। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে অ্যাপটি লঞ্চ হওয়ার পর প্রথম মাসেই ১ লাখ মানুষ এটি ডাউনলোড করে। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যবহারকারী সংখ্যা হ্রাস পেতে থাকে। আন্তর্জাতিকভাবে সাফল্য অর্জন করতে ব্যর্থ হয় এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের বাজারেও তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। গুগল নিউজ, অ্যাপল নিউজ এবং SmartNews-এর মতো শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারেনি। এছাড়া, অ্যাপটির মূল ফোকাস থেকে সরে যাওয়ায় ব্যবহারকারীরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে।


Artifact কেন ব্যর্থ হলো?


      ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে অ্যাপটির নতুন ইনস্টল সংখ্যা মাত্র ১২,০০০-এ নেমে আসে, যা আগের তুলনায় অনেক কম। কেভিন সিস্ট্রোম জানান, তারা অ্যাপটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কারণ তারা মনে করেন বাজারে যথেষ্ট বড় সুযোগ নেই। তবে Artifact-এর ব্যর্থতার পেছনে আরও কিছু কারণ রয়েছে:


      1. চাহিদার অভাব: প্রথম দিকে ব্যাপক ডাউনলোড হলেও, সময়ের সাথে ব্যবহারকারী সংখ্যা দ্রুত কমে যায়।


      2. আন্তর্জাতিক বিস্তৃতির ব্যর্থতা: তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে তেমন প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ হয়।


      3. প্রতিযোগিতা: গুগল নিউজ, অ্যাপল নিউজ, এবং SmartNews-এর মতো প্রতিষ্ঠিত প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া সম্ভব হয়নি।


      4. ফোকাসের অভাব: শুরুতে AI-নির্ভর সংবাদ ফিচার দিয়ে সাফল্য অর্জন করলেও, পরে অন্যান্য ফিচার যোগ করতে গিয়ে মূল লক্ষ্য হারিয়ে ফেলে।


      5. তহবিল: সম্পূর্ণ নিজেরা অর্থায়ন করায়, ক্ষতির মুখে না পড়তে প্রকল্পটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।


শিক্ষণীয় বিষয়:


      1. প্রতিযোগিতার চাপ: প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে হলে নতুনত্ব এবং সঠিক কৌশল থাকা জরুরি।


      2. ব্যবহারকারীর প্রত্যাশা: ব্যবহারকারীদের জন্য নতুন কিছু না আনতে পারলে তারা সহজেই বিদ্যমান বিকল্পে ফিরে যাবে।


      3. মূল উদ্দেশ্য বজায় রাখা: ফিচার যোগ করা প্রয়োজন হলেও, মূল ফোকাস ধরে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


      4. আর্থিক পরিকল্পনা: নিজেদের তহবিলে প্রকল্প চালাতে হলে ভালো পরিকল্পনা ও বাজেট থাকা জরুরি।


      5. সঠিক সময়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ: সময়মতো প্রকল্প বন্ধ করা ভবিষ্যতের ক্ষতি থেকে রক্ষা করেছে।


 এই শিক্ষাগুলো নতুন উদ্যোগের জন্য মূল্যবান, বিশেষ করে যারা নতুন প্রযুক্তি ও বাজার প্রবণতার সঙ্গে কাজ করছে।


Post a Comment

Previous Post Next Post