অ্যাস্টার্ট মেডিক্যালের পতন: $১৪ মিলিয়ন বিনিয়োগ সত্ত্বেও কেন ব্যর্থ হলো এই হেলথটেক স্টার্টআপ?

 অ্যাস্টার্ট মেডিক্যালের পতন: $১৪ মিলিয়ন বিনিয়োগ সত্ত্বেও কেন ব্যর্থ হলো এই হেলথটেক স্টার্টআপ?

      ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে সাত বছরের যাত্রা শেষে, অ্যাস্টার্ট মেডিক্যাল তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। প্রিম্যাচিউর শিশুর যত্নে প্রযুক্তির মাধ্যমে নতুন উদ্ভাবনের লক্ষ্যে কাজ শুরু করা এই স্টার্টআপটি $১৪ মিলিয়ন ইউএস ডলার বিনিয়োগ পেলেও, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখে শেষ পর্যন্ত তারা সফল হতে পারেনি।


অ্যাস্টার্ট মেডিক্যালের(Astarte Medical) সূচনা ও উদ্দেশ্য_


      ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত, অ্যাস্টার্ট মেডিক্যালের লক্ষ্য ছিল অপরিণত শিশুদের জন্য উন্নত পুষ্টি এবং খাওয়ানোর তথ্য বিশ্লেষণ করার জন্য একটি সফটওয়্যার তৈরি করা। এর প্রধান পণ্য NICUtrition, মূলত, নিউনাটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (NICU) এ ভর্তি নবজাতকদের পুষ্টি সরবরাহের উপর নজরদারি এবং বিশ্লেষণের জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল।


বড় অর্জন ও চ্যালেঞ্জ_


প্রথমদিকে, অ্যাস্টার্ট মেডিক্যাল বেশ কয়েকটি মাইলফলক অর্জন করেছিল, যেমন:


২০১৯ সালে তারা $৫ মিলিয়ন ডলার তহবিল সংগ্রহ করে।


২০২০ সালে প্রথমবারের মতো একটি হাসপাতালের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করে।


২০২১ সালে আরও $৭.৬ মিলিয়ন বিনিয়োগ সংগ্রহ করে।


      কিন্তু এই অর্জনগুলির পরও, তারা বাজারে পর্যাপ্ত সাড়া পায়নি। ট্রেসি ওয়ারেন, প্রতিষ্ঠানটির সিইও এবং সহ-প্রতিষ্ঠাতা, এক সাক্ষাৎকারে ব্যাখ্যা করেন যে, তাদের সফটওয়্যার কেবল চারটি হাসপাতালের সাথে চুক্তি করতে পেরেছিল, যা তাদের বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম।


ব্যর্থতার মূল কারণসমূহ:


      1. প্রোডাক্ট-মার্কেট ফিট (PMF) এর অভাব: স্বাস্থ্য খাতে, বিশেষ করে হাসপাতালে, নতুন সফটওয়্যার প্রযুক্তির চাহিদা খুব বেশি নয়। ওয়ারেনের মতে, হাসপাতালগুলো সাধারণত উদ্ভাবনে আগ্রহী নয়, এবং তাদের নতুন প্রযুক্তি গ্রহণে তেমন প্রণোদনা নেই। তারা নতুন সফটওয়্যার কিনতে তেমন আগ্রহী না, এবং পরিবর্তন আনার কোনো ঝুঁকিও নেই বলেই তারা স্থবির থাকে।


      2. মহামারীর প্রভাব: কোভিড-১৯ মহামারী স্বাস্থ্য প্রযুক্তি স্টার্টআপগুলোর জন্য তহবিল বাড়ানোর সুযোগ করে দিলেও, একই সময়ে হাসপাতালগুলোর আর্থিক সংকটের কারণেও তারা নতুন সফটওয়্যারে বিনিয়োগে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তারা মহামারীকালীন সংকট মোকাবিলায় বেশি ব্যস্ত থাকায়, নতুন প্রযুক্তি গ্রহণের ঝুঁকি নেয়নি।


       3. অপারেশনাল চ্যালেঞ্জ: ইলেকট্রনিক মেডিক্যাল রেকর্ডস (EMR) এর সাথে সংহত হওয়ার জটিলতা এবং স্বাস্থ্য ডেটার জটিলতা স্টার্টআপটির পণ্য সরবরাহ ও বিস্তারকে কঠিন করে তোলে। এই প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে ওঠা অ্যাস্টার্টের জন্য সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল ছিল।



হেলথটেক ইন্ডাস্ট্রির বাস্তবতা_


অ্যাস্টার্টের পতনের মধ্যে দিয়ে আমরা স্বাস্থ্য প্রযুক্তি খাতের কিছু বাস্তবতাকে উপলব্ধি করতে পারি:


      উদ্ভাবনে কম প্রণোদনা: হাসপাতালগুলোর উদ্ভাবন না করার জন্য কোনো শাস্তি বা জবাবদিহিতা নেই, তাই তারা সাধারণত নতুন প্রযুক্তি গ্রহণে আগ্রহী নয়। তারা যে কোনও ধরনের ঝুঁকি নিতে অনাগ্রহী এবং নতুন পরিবর্তনের দিকে ঝোঁকে না।


      ডিভাইস বনাম সফটওয়্যার: স্বাস্থ্যসেবা খাতের হাসপাতালগুলো প্রায়শই নতুন চিকিৎসা ডিভাইস কিনে থাকে, কিন্তু নতুন সফটওয়্যার কেনার ক্ষেত্রে তারা অভ্যস্ত নয়। নতুন সফটওয়্যার বিক্রি করা তাই অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং।


      অভিজ্ঞতার অভাব: মহামারীর সময় স্বাস্থ্য প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী হলেও, অনেকেই এই খাতের জটিলতা পুরোপুরি না বুঝে বিনিয়োগ করেছেন। ফলে অতিরিক্ত বিনিয়োগ এবং অপরিণত ব্যবসায়িক মডেলের কারণে দ্রুত ধ্বংস হয়েছে অনেক স্টার্টআপ।


শাটডাউন ও শিক্ষণীয় বিষয়_


ওয়ারেনের সাক্ষাৎকার থেকে আমরা কিছু মূল্যবান শিক্ষণীয় দিক পেয়েছি, যা স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠাতাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে:


      1. চ্যালেঞ্জের ব্যাপারে স্বচ্ছ থাকুন: প্রতিষ্ঠানের সমস্যাগুলোর ব্যাপারে বিনিয়োগকারী এবং কর্মীদের আগে থেকেই জানিয়ে রাখা উচিত। কঠিন সময়ে তাদের অবহিত করা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে তারা নতুন নিয়োগের ঝুঁকি এবং চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে সচেতন থাকে।


      2. পিভট করার সিদ্ধান্ত সহজ নয়: ওয়ারেন AI এর দিকে পিভট করার প্রস্তাব পেয়েছিলেন, যা হয়তো আরও ফান্ডিং পেতে সহায়ক হতো। কিন্তু তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, এই পরিবর্তন তাদের আসল সমস্যার সমাধান নয়। তাই AI এর দিকে না ঝুঁকে, তিনি তার মূল পণ্যেই মনোযোগ দিয়েছিলেন।


অ্যাস্টার্ট মেডিক্যালের এই পতন আমাদের শেখায় যে স্বাস্থ্য প্রযুক্তি খাতের স্টার্টআপগুলোর জন্য প্রোডাক্ট-মার্কেট ফিট নিশ্চিত করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। শুধু তহবিল সংগ্রহ করে বা উদ্ভাবনী পণ্য তৈরি করলেই সফলতা আসে না। বাজারের চাহিদা, প্রযুক্তির গ্রহণযোগ্যতা এবং উদ্ভাবনে প্রণোদনা—এই বিষয়গুলো স্টার্টআপের সফলতা বা ব্যর্থতার মূল চাবিকাঠি।


"Refah Celestia" এর সাপ্তাহিক নিউজলেটার Failures & Lessons এ এই ধরনের ব্যর্থতার গল্প থেকে আমরা কীভাবে ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষণীয় দিক নিতে পারি তা বিশ্লেষণ করা হয়ে থাকে, যা নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান।


Post a Comment

Previous Post Next Post