বাজার গবেষণা (Market Research): কেন এবং কীভাবে করবেন?
Photo:-Freepik |
যেকোনো ব্যবসা শুরু করার আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর মধ্যে একটি হলো বাজার গবেষণা। বাজার সম্পর্কে ভালোভাবে না জানলে ব্যবসায় পথে অনেক ধরণের ঝামেলা হতে পারে। তাই আজ আমরা সহজভাবে আলোচনা করবো বাজার গবেষণা কী, কেন এটা দরকার, আর কীভাবে করবেন।
বাজার গবেষণা কী?
বাজার গবেষণা বলতে বোঝায়, যেটা করে আপনি আপনার লক্ষ্য গ্রাহক, প্রতিযোগী এবং বাজার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করবেন। সহজ কথায়, এটা এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন, আপনার পণ্য বা সেবা বাজারে কতটা প্রয়োজনীয়, এবং সেটা কেমনভাবে আরও ভালো করা যায়। এই গবেষণার মাধ্যমে জানা যায়, বাজারে কোন জিনিসের চাহিদা কেমন, কোন প্রতিযোগী কীভাবে কাজ করছে, আর আপনি কীভাবে আলাদা হয়ে গ্রাহকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন।
কেন বাজার গবেষণা জরুরি?
১. বাজারের চাহিদা বুঝতে সাহায্য করে: আপনি কেমন পণ্য বা সেবা দিচ্ছেন, তার বাজারে আদৌ প্রয়োজন আছে কিনা—এটা জানা জরুরি। বাজার গবেষণার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন, আসলে গ্রাহকরা কী চায় আর সেটা পূরণ করতে আপনার পণ্য বা সেবা কতটা সক্ষম।
২. প্রতিযোগীদের সম্পর্কে ধারণা দেয়: আপনার প্রতিযোগীরা কী করছে তা না জেনে ব্যবসা চালানো ঝুঁকিপূর্ণ। গবেষণার মাধ্যমে প্রতিযোগীদের শক্তি, দুর্বলতা, এবং তারা কীভাবে বাজারে টিকে আছে, তা জানা যায়।
৩. লক্ষ্য গ্রাহক খুঁজে পেতে সহায়তা করে: আপনার পণ্য কোন বয়সের লোকজন কিনবে, তারা কোন শ্রেণীর, তাদের পছন্দ কেমন—এসব জানা দরকার। বাজার গবেষণার মাধ্যমে আপনি আপনার লক্ষ্য গ্রাহকদের স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করতে পারবেন।
৪. বিজনেস প্ল্যান তৈরি সহজ করে: আপনি যদি বাজার এবং গ্রাহক সম্পর্কে ভালোভাবে জানেন, তবে আপনার ব্যবসার পরিকল্পনা হবে আরও শক্তিশালী এবং কার্যকর।
কীভাবে বাজার গবেষণা করবেন?
বাজার গবেষণার জন্য কিছু ধাপে কাজ করতে হয়। ধাপগুলো সহজভাবে তুলে ধরা হলো:
১. লক্ষ্য ঠিক করুন
প্রথমে আপনাকে ঠিক করতে হবে, আপনি বাজার থেকে ঠিক কী জানতে চাইছেন। আপনার লক্ষ্য কি নতুন পণ্যের চাহিদা যাচাই করা, নাকি প্রতিযোগীদের বিশ্লেষণ করা? লক্ষ্য নির্দিষ্ট করা থাকলে গবেষণা করা সহজ হবে।
২. বাজারের ধরন নির্ধারণ করুন
আপনার ব্যবসা কোন বাজারে চালাবেন—স্থানীয়, জাতীয়, না কি আন্তর্জাতিক? স্থানীয় হলে, এলাকার বাজার এবং প্রতিযোগীদের বিশ্লেষণ করতে হবে। আর আন্তর্জাতিক হলে, সেই দেশের অর্থনীতি এবং সংস্কৃতি সম্পর্কেও জানতে হবে।
৩. তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি ঠিক করুন
তথ্য সংগ্রহের জন্য দুই ধরনের পদ্ধতি আছে:
প্রাথমিক তথ্য (Primary Data): সরাসরি তথ্য, যেমন—কাস্টমারদের ইন্টারভিউ নেওয়া, সার্ভে করা, কিংবা ফোকাস গ্রুপের মাধ্যমে মতামত নেওয়া।
গৌণ তথ্য (Secondary Data): যেসব তথ্য আগে থেকে আছে, যেমন—ইন্টারনেটের রিসার্চ রিপোর্ট বা সরকারি পরিসংখ্যান।
৪. গ্রাহকদের কাছ থেকে মতামত নিন
গ্রাহকদের কাছ থেকে সঠিক তথ্য পেতে আপনি অনলাইন সার্ভে করতে পারেন, অথবা ফোকাস গ্রুপ বা ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার নিতে পারেন। সোশ্যাল মিডিয়াতেও কাস্টমারদের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়।
৫. প্রতিযোগীদের বিশ্লেষণ করুন
প্রতিযোগীরা কীভাবে ব্যবসা চালাচ্ছে, তাদের পণ্য বা সেবা কেমন, দাম কত ইত্যাদি বিশ্লেষণ করতে হবে। তাদের কী কী সাফল্য বা দুর্বলতা আছে, সেটা জেনে নিজেকে আরও ভালোভাবে প্রস্তুত করা যাবে।
৬. তথ্য বিশ্লেষণ করুন
যে তথ্যগুলো সংগ্রহ করেছেন, সেগুলো ভালোভাবে বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। গ্রাহকদের মতামত, বাজারের ট্রেন্ড, প্রতিযোগীদের কার্যক্রম—সবকিছু মাথায় রেখে ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নিন।
বাজার গবেষণার কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস:
বিশ্বস্ত তথ্যের উৎস ব্যবহার করুন: ভুল তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া ব্যবসার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, তাই সঠিক উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করা জরুরি।
নিয়মিত গবেষণা চালিয়ে যান: শুধু একবার গবেষণা করলেই হবে না। বাজারের চাহিদা নিয়মিত পরিবর্তন হয়, তাই নিয়মিত বাজার গবেষণা চালিয়ে যেতে হবে।
তথ্য যাচাই করুন: বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই করা জরুরি। ভিন্ন ভিন্ন তথ্য একত্রিত করে বিশ্লেষণ করা ভালো ফল দেয়।
শেষকথা_
বাজার গবেষণা হল এমন একটি মাধ্যম যা আপনার ব্যবসার সাফল্যের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তুলবে। সঠিক বাজার গবেষণার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন, আপনার পণ্য বা সেবা কোথায় এবং কেমনভাবে সফল হতে পারে। প্রতিযোগীদের কার্যক্রম এবং গ্রাহকদের প্রয়োজনগুলো বুঝে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারলে আপনার ব্যবসা অনেকদূর এগিয়ে যাবে।
তাই ব্যবসা শুরুর আগেই সঠিকভাবে বাজার গবেষণা করুন, কারণ এটি হবে আপনার সাফল্যের প্রথম ধাপ।