মাইক্রোফাইনেন্স: ক্ষুদ্র অর্থায়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন।
মাইক্রোফাইনেন্স কিভাবে কাজ করে?
মাইক্রোফাইনেন্সের কাজটি অত্যন্ত সহজভাবে পরিচালিত হয়। নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করা হয়:
1. আবেদন প্রক্রিয়া: সাধারণ মানুষ বা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা মাইক্রোফাইনেন্স প্রতিষ্ঠানের কাছে ঋণের জন্য আবেদন করে।
2. যোগ্যতা যাচাই: ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান আবেদনকারীর আর্থিক অবস্থা যাচাই করে এবং ঋণ দেয়ার যোগ্যতা নির্ধারণ করে।
3. ঋণ প্রদান: যোগ্য হলে নির্দিষ্ট পরিমাণ ঋণ প্রদান করা হয়।
4. ঋণ পরিশোধ: ঋণগ্রহীতা মাসিক বা নির্দিষ্ট সময়ে কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করে।
উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি কোনো ক্ষুদ্র ব্যবসা (যেমন একটি ছোট মুদি দোকান) শুরু করতে চান, তাহলে মাইক্রোফাইনেন্স প্রতিষ্ঠান থেকে ২০,০০০ টাকা ঋণ নিতে পারেন। এরপর এই টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করার পর মাসিক কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করতে পারেন।
মাইক্রোফাইনেন্সের ইতিহাস ও আবিষ্কারক:
মাইক্রোফাইনেন্স ব্যবস্থার যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশের চট্টগ্রামের ড.মুহাম্মদ ইউনুসের হাত ধরে। তিনি গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন এবং দরিদ্র মানুষের জন্য ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানের উদ্যোগ নেন। তার লক্ষ্য ছিল, যাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে যাওয়ার সুযোগ নেই, তাদেরকে এই ঋণ সুবিধা দিয়ে আত্মনির্ভরশীল করা। গ্রামীণ ব্যাংক ও মাইক্রোফাইনেন্স ব্যবস্থার সাফল্যের জন্য ২০০৬ সালে ড. মুহাম্মদ ইউনুস নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন।
কিভাবে শুরু করবেন?
মাইক্রোফাইনেন্স প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে আপনি সহজেই ঋণ গ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেন। তবে ঋণ নেয়ার আগে আপনার ব্যবসার পরিকল্পনা ও ব্যয়ের ধরণ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা জরুরি। কিছু মাইক্রোফাইনেন্স প্রতিষ্ঠান নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য প্রশিক্ষণের সুযোগও প্রদান করে, যা ঋণ ব্যবহারে সহায়তা করে।
মাইক্রোফাইনেন্সের সুবিধা:
1. দারিদ্র্য বিমোচন: এটি দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করার সুযোগ দেয়, যা তাদের আয়ের উৎস তৈরি করে।
2. নারীর ক্ষমতায়ন: বাংলাদেশে মাইক্রোফাইনেন্সের অধিকাংশ ঋণপ্রাপ্ত নারী উদ্যোক্তা। এর ফলে নারী ক্ষমতায়নের একটি সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
3. স্বল্প সুদের হার: সাধারণত মাইক্রোফাইনেন্স প্রতিষ্ঠানের সুদের হার তুলনামূলকভাবে কম হয়ে থাকে।
মাইক্রোফাইনেন্সের ঝুঁকি এবং ক্ষতি:
1. ঋণের বোঝা: ঋণগ্রহীতারা যদি সঠিকভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে না পারেন, তবে ঋণ পরিশোধ করতে সমস্যা হতে পারে।
2. অপব্যবহার: অনেক সময় গ্রাহকরা ঋণের টাকা ব্যক্তিগত খরচে ব্যবহার করেন, যা ঋণ পরিশোধে সমস্যা সৃষ্টি করে।
3. উচ্চ সুদের হার: কিছু প্রতিষ্ঠানে সুদের হার তুলনামূলকভাবে বেশি হতে পারে, যা গ্রাহকদের জন্য একটি ঝুঁকি।
মাইক্রোফাইনেন্সের মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে অর্থনৈতিকভাবে মুক্তি দেওয়া সম্ভব। তবে সঠিক পরিকল্পনা, ব্যবস্থাপনা ও প্রয়োগ ছাড়া এটি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই, ঋণ গ্রহণের আগে একটি পরিষ্কার পরিকল্পনা তৈরি করা এবং ঋণের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।